
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৪৮১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৫
৪৮১৭-(১৫২/১৯০৫) ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল-হারিসী (রহঃ) ….. সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহঃ) বললেন, হে শায়খ! আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! (শুনাবো)। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামাতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এর বিনিময়ে কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর। তা বলা হয়েছে, এরপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তার প্রদত্ত নি’আমাতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এত বড় নি’আমাত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যাতে লোকে বলে, তুমি একজন কারী। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা’আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিআমাতসমূহের কথা তাকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এসব নি’আমাতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছে। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে ’দানবীর’ বলে অভিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৭০, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৭১)
এই হাদিসটি কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের বিচার ও তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরে। হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইবাদত বা সৎকর্মের বাহ্যিক রূপ যতই চমৎকার হোক না কেন, তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য না হয় এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়।
হাদিসের মূল শিক্ষা:
১. নিয়তের বিশুদ্ধতা:
প্রথম শহীদের বিচার হয়েছিল, যিনি বাহ্যিকভাবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল লোকেরা তাকে বীর হিসেবে প্রশংসা করুক।
এটি প্রমাণ করে, যে কোনো আমল যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়, তবে তা মূল্যহীন।
২. জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষা:
যারা কুরআন তিলাওয়াত করেন বা ইসলামের জ্ঞান বিতরণ করেন, তাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়া আবশ্যক। যদি এটি লোকপ্রশংসার জন্য হয়, তবে তাদের আমলও বাতিল।
৩. দানের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
ধনী ব্যক্তির দানের উদ্দেশ্যও যদি লোক দেখানোর হয়, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি যত বড় দানই হোক না কেন, নিয়ত সঠিক না থাকলে তার কোনো মূল্য নেই।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"আর তারা কেবল এই নির্দেশই পেয়েছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য দ্বীন পালন করবে।"(সূরা বায়্যিনাহ: ৯৮:৫)
উপসংহার:
এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির কাজের বিচার তার নিয়তের ভিত্তিতে হবে। আমাদের আমলগুলো শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়। আল্লাহ আমাদের আমল ও নিয়ত বিশুদ্ধ করার তাওফিক দিন। আমিন।