মানুষের পোষা প্রাণীর প্রতি আগ্রহের কারণে কুকুরের মধ্যে একটি তৃতীয় ধাপের গৃহপালন প্রক্রিয়া চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পোষা কুকুরকে বন্ধুত্বপূর্ণ, শান্ত এবং গৃহস্থ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হিসেবে তৈরি করার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
কয়েক দশক আগেও কুকুরকে প্রধানত কাজের জন্য রাখা হতো—যেমন শিকার, গৃহপালিত প্রাণী পাহারা দেওয়া বা ঘরবাড়ি রক্ষা করা। তবে বর্তমান সময়ে মানুষের জন্য কুকুর companionship বা সঙ্গী হিসেবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে এই পরিবর্তনের ফলে কুকুরের মধ্যে সামাজিক বন্ধনের জন্য দায়ী একটি হরমোন, বিশেষত সেবা-কুকুরদের ক্ষেত্রে, বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের জীবনের গতি ধীর হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরের জীবনেও এই পরিবর্তন ঘটেছে, যা কুকুরের গৃহপালন প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৭ সালে সুইডেনের লিংকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখান যে অক্সিটোসিন নামের হরমোনই কুকুরকে তার মালিকের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, যখন মানুষ নেকড়েদের পোষ মানিয়ে কুকুরে পরিণত করে, তখন এই অক্সিটোসিনের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এই গবেষণাটি কুকুরের সঙ্গে মানুষের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ও তাদের “সহায়তা চাওয়ার” প্রবণতা নিয়ে পরিচালিত হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, অক্সিটোসিন কুকুরদের সামাজিক দক্ষতাকে প্রভাবিত করে, যা অনেকটাই তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকরা ৬০টি গোল্ডেন রিট্রিভারের ওপর একটি পরীক্ষা চালান, যেখানে কুকুরগুলোকে এমন একটি বয়াম খুলতে বলা হয় যেটা আসলে খোলা সম্ভব ছিল না। এর আগে তাদের নাকে অক্সিটোসিন স্প্রে এবং একটি নিরপেক্ষ স্যালাইন স্প্রে দেওয়া হয়। তারা দেখেন যে অক্সিটোসিন প্রাপ্ত কুকুরেরা তুলনামূলক দ্রুত মালিকের কাছে সাহায্যের জন্য ফিরে আসে।
এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে গৃহপালন প্রক্রিয়ায় কুকুরের সামাজিক দক্ষতা ও আচরণের উপর জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে। আজ ডিউক ইউনিভার্সিটির কুকুর-বিজ্ঞানী ব্রায়ান হেয়ার এবং ভেনেসা উডস মন্তব্য করেছেন, কুকুরের আচরণ ও জীবনে যে তৃতীয় ধাপের পরিবর্তন ঘটছে, তার সঙ্গে তাদের পূর্বের কর্মী ভূমিকা থেকে বর্তমানে সঙ্গী হিসেবে ভূমিকার পরিবর্তনও সম্পৃক্ত।
এই পরিবর্তনের ফলে কুকুরদের শুধু আচার-ব্যবহার নয়, সম্ভবত জৈবিক বৈশিষ্ট্যও রূপান্তরিত হচ্ছে।