আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নজিরবিহীন হারে দেশ ছাড়ছেন ইসরায়েলিরা, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের সারা জীবনের সঞ্চয়, শিক্ষা এবং কর্মদক্ষতা। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় ৪০,৬০০ ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছেন। তাদের এই দেশত্যাগের মূল কারণ হিসেবে ইসরায়েলের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে চলমান দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধকে দায়ী করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (সিবিএস) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে ইসরায়েল ত্যাগকারী ৪০,৬০০ জনের সংখ্যা ২০২২ সালের মাসিক গড় দেশত্যাগের তুলনায় ২,২০০ জন বেশি। সিবিএস আরও জানিয়েছে, "দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসীর" সংখ্যা এ সময়ে ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ অনেকেই আর দেশে ফিরতে চান না।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মোট ৫৫,৪০০ মানুষ ইসরায়েল ছেড়েছে, যেখানে আগের এক দশকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩৭ হাজার জন দেশ ত্যাগ করতো। তবে সেই বছর প্রায় ২৮,০০০ ইসরায়েলি আবার দেশে ফিরে আসে।
জেরুসালেম পোস্ট আরও জানায়, ২০২৩ সালে যারা দেশ ছেড়েছেন তাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ তেল আবিবসহ দেশের ধনী অঞ্চলগুলোর বাসিন্দা। ২৮ শতাংশ হাইফা এবং উত্তরাঞ্চলের, ১৫ শতাংশ দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা, এবং ১৩ শতাংশ জেরুজালেমের। জুডিয়া-সামারিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ দেশ ত্যাগ করেছেন।
সিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশত্যাগী পুরুষদের গড় বয়স ছিল ৩১.৬ বছর এবং নারীদের গড় বয়স ছিল ৩২.৫ বছর। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে ৪০ শতাংশই দেশ ত্যাগ করেছেন, যা ইসরায়েলের কর্মক্ষম যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে হারানোর ইঙ্গিত দেয়। তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৫ শতাংশ নারী ছিলেন অবিবাহিত, যা স্থায়ী দেশান্তরিত হওয়ার প্রবণতাকে তুলে ধরে।
দেশত্যাগীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর ৪১ শতাংশ ইসরায়েলে জন্মগ্রহণ করেছেন। বিদেশে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ইউরোপ থেকে আসা, যার মধ্যে ৭২ শতাংশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে, আরব মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে দেশত্যাগের হার তুলনামূলকভাবে কম। তারা ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২১.৩ শতাংশ হলেও, দেশত্যাগী জনসংখ্যায় তাদের অংশ মাত্র ৬.২ শতাংশ।