ডিমের দাম কেন বাড়ল !!???
ভারত থেকে ডিম আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করার সরকারের প্রচেষ্টায় এক বড় প্রশ্ন উঠেছে: দুই দেশে দাম এত পার্থক্য কেন?
পোল্ট্রি শিল্প মালিকদের সংগঠনের মতে, মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের দাম ভিন্নতার অন্যতম কারণ। তারা মনে করেন, সরকার কেন আমদানি করছে, যখন এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তারা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদে আমদানির ফলে খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ডিমের খামার রয়েছে, তবে গত দুই বছরে প্রায় ৬ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, আমদানির ফলে দেশের ক্ষুদ্র খামারগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে, যা কেবল আমদানিকারক কোম্পানির সুবিধা বাড়াবে।
ঢাকায় ‘হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দুই চালানে ডিম আমদানি করেছে, যেখানে কর পরিশোধের পর প্রতি ডিমের দাম পড়েছে সাড়ে সাত টাকা। কিন্তু এই দরে বাজারে কোনো প্রভাব নেই, বরং দাম বেড়েছে। সরকারের চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে এর প্রভাব অনুপস্থিত।
বাজারে দাম বাড়ার কারণে পোল্ট্রি মালিকদের সংগঠন সরকারকে মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম নিয়ে কারসাজির দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। দেশে ডিমের দৈনিক চাহিদা নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৫ কোটি ও বিপিএ ৪ কোটি বলেছে, কিন্তু ভারত থেকে অনুমোদিত আমদানি সাড়ে চার কোটি।
ডিমের দাম কেন বাড়ছে, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতে, খাদ্য ও বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়েছে, আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে, এবং বন্যার কারণে খামার ভেসে গেছে।
কাপ্তানবাজারের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম ১৩ টাকা ২০ পয়সা, যা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ৬০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সংকটের কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বিপিএর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল জানান, বাচ্চা কিনতে অসুবিধা হচ্ছে এবং খাদ্যের দাম বেশি। বন্যার কারণে অন্তত ৩০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। সুমন হাওলাদার আশা করছেন, নভেম্বরের শুরুতে দাম কমে যাবে, কারণ শীতে সবজির সরবরাহ বাড়ে এবং ডিমের চাহিদা কমে।
ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন। তারা বলছেন, ডিমের উৎপাদনের খরচ বাড়ার কারণ খাদ্য ও বাচ্চার দাম।
ভারত থেকে আনা ডিমের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে সাত টাকা, কিন্তু এর সাথে অন্যান্য খরচ যোগ হলে দাম ১০ টাকার বেশি হবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছেন, নানা কারণে ডিমের দাম বাড়তে পারে।
সর্বশেষ, আমদানিকারকদের লাভ হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের কোনো উপকার হচ্ছে না। বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলছেন, ডিমের উৎপাদন খরচ কমাতে খাদ্যের দাম কমানো প্রয়োজন।
এছাড়া, আমদানির প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না, তবে সরকার চাইলে কিছুটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।