ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করার জন্য সম্প্রতি একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে পারে। এটি বাংলাদেশের রেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, যা খুলনা এবং ঢাকা শহরের মধ্যে যাত্রীর সময় কমাতে সাহায্য করবে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রা
২৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন হয়ে খুলনা পর্যন্ত একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করেছে। এই ট্রেনটি ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলেছিল এবং সফলভাবে তিনটি ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে।
রুট এবং যাত্রার সময়সূচি:
ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর থেকে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
এটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশনে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে।
পরে ১০টা ৪০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং দুপুর ১টা ১০ মিনিটে খুলনা পৌঁছায়।
২. যাত্রীদের সেবা এবং কার্যক্রম
পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রায় বিভিন্ন রেলওয়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন:
রেলপথ বিভাগের সচিব আব্দুল বাকি,
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত হোসেন,
পশ্চিম রেলওয়ে অঞ্চলের প্রধান কর্মকর্তারা,
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও চায়না রেলওয়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এছাড়া, ট্রেনটির লোকো মাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং সহকারী লোকো মাস্টার গোলাম রসুলও এতে অংশগ্রহণ করেন। ট্রেন চালু হওয়ার পর, কর্মকর্তারা অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং নতুন রুটে ট্রেন চলাচলের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী।
৩. বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া
রেলপথ বিভাগের সচিব আব্দুল বাকি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই রুটে ট্রেনের যাত্রা বাণিজ্যিকভাবে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে ঢাকা ও খুলনা মধ্যবর্তী যাত্রীরা এখন সাড়ে ৩ ঘণ্টায় যাত্রা সম্পন্ন করতে পারবেন। এর আগে, এই রুটে যাত্রীদের যাত্রায় ৬ ঘণ্টার বেশি সময় লাগতো।
৪. ট্রেনের গতি এবং কোচের সংকট
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত হোসেন জানান, এই ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোরের পদ্মবিলা স্টেশন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় এবং পদ্মবিলা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলবে।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের কিছু কোচের সংকট রয়েছে, তাই ট্রেনের সংখ্যা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। তবে, তারা চেষ্টা করবেন যতটুকু সম্ভব সীমিত সম্পদ নিয়ে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে।
৫. অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব
এ উচ্চ গতির ট্রেন চলাচল খুলনা ও ঢাকার মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজতর করবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা, যাত্রীরা এবং পর্যটকরা ট্রেনের মাধ্যমে দ্রুত এবং নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে এই রুটে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও সক্রিয় হতে পারে।
এছাড়া, ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই অঞ্চলের পরিবহণ খাতে নতুন একটি পরিবর্তন আসবে, যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে।
৬. মোট কথা
ঢাকা-খুলনা রুটে নতুন ট্রেন চালুর মাধ্যমে দুই শহরের মধ্যে যাতায়াত আরও দ্রুত ও সহজ হবে। রেলপথ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরীক্ষামূলক ট্রেনের সফল ট্রায়াল পরবর্তী সময় বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে, যা এ অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য এক বড় সুবিধা নিয়ে আসবে।</b>