প্রক্রিয়াজাত খাবার বলতে এমন খাবার বোঝানো হয় যেগুলো কাঁচামাল থেকে তৈরি করার পর খুব বেশি পরিবর্তন না হয়ে কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যেমন আটা থেকে পাউরুটি তৈরি, দুধ থেকে দই প্রস্তুত করা, কিংবা শুকনা ফল তৈরি করা। এই ধরনের খাবারে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানগুলি অনেকাংশে অক্ষত থাকে।
এছাড়া, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বলতে এমন খাবার বোঝানো হয় যেগুলো তৈরিতে অনেক বেশি রাসায়নিক উপাদান, রং বা স্বাদ যুক্ত করা হয়, এবং এগুলো অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণের ফলে পুষ্টির মান কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম স্বাদ বা ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত পপকর্ন।
সব মিলিয়ে, কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবার স্বাস্থ্যকর হতে পারে, তবে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার।
প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods):
প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো সেসব খাবার যা প্রস্তুতির সময় কাঁচামাল বা উপাদানগুলোর কিছু পরিবর্তন ঘটে, তবে তারা তার মৌলিক গুণাবলী প্রায় অক্ষত রাখে। এই প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে খাবারের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, পুষ্টি সংরক্ষণ বা ভোজনের উপযোগিতা বাড়ানো হয়।
উদাহরণ:
বাদামি পাউরুটি:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: পাউরুটি গমের আটা দিয়ে প্রস্তুত হয়। তবে, বাদামি পাউরুটি সাধারণত সম্পূর্ণ গম থেকে তৈরি হয়, তাই এতে ফাইবার, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট ইত্যাদি থাকে।
- স্বাস্থ্যকর দিক: এতে ভিটামিন বি, আঁশ (ফাইবার), এবং প্রোটিন পাওয়া যায় যা হজমের সহায়ক এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
টিনজাত ডাল বা মটর:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: ডাল বা মটর কাঁচা অবস্থায় ভিজিয়ে রান্না করা হয়, তবে টিনজাত ডাল বা মটর ইতিমধ্যে সেদ্ধ এবং সংরক্ষিত থাকে, ফলে রান্না করার ঝামেলা কম হয়।
- স্বাস্থ্যকর দিক: এই ডাল ও মটরগুলো উচ্চ প্রোটিন, আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ফোলেটের ভালো উৎস। সুতরাং, টিনজাত ডাল বা মটর কাঁচার মতোই স্বাস্থ্যকর, এবং এগুলো দ্রুত প্রস্তুতির জন্য আদর্শ।
টক দই:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: দুধ থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে দই তৈরি হয়, যা প্রোবায়োটিক্স, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-১ সমৃদ্ধ। যদি এতে অতিরিক্ত সুগন্ধি, রঙ বা স্বাদ যোগ না করা হয়, তবে এটি স্বাস্থ্যকরই থাকে।
- স্বাস্থ্যকর দিক: প্রোবায়োটিক্স দেহের ভাল ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, হজমে সহায়ক এবং দাঁতের জন্য উপকারী।
শুকনা ফল:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: শুকনা ফল (যেমন কিশমিশ, খেজুর, আম) তৈরি হয় তাজা ফল থেকে জলীয় অংশ অপসারণ করে। এতে পুষ্টিগুণ যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ইত্যাদি অক্ষত থাকে।
- স্বাস্থ্যকর দিক: শুকনা ফল শক্তিবর্ধক এবং একে সহজে বহনযোগ্য। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্রমের জন্য উপকারী এবং দেহের জন্য প্রাকৃতিক শক্তির উৎস।
পপকর্ন:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: সাধারণ বা হালকা লবণ দিয়ে পপকর্ন তৈরিতে কৃত্রিম ফ্যাট এবং অতিরিক্ত স্বাদ যুক্ত করা হয় না, তবে মাইক্রোওয়েভে পপকর্ন তৈরি করতে কিছু কৃত্রিম উপাদান থাকতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর দিক: পপকর্ন প্রাকৃতিকভাবে আঁশ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, এবং এটি কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিত।
সয়া দুধ:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: সয়া দুধ সয়াবিন থেকে প্রস্তুত হয়, এবং এতে প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি থাকে।
- স্বাস্থ্যকর দিক: এটি ল্যাকটোজ অপার্য়ের জন্য উপযুক্ত এবং গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে বেশ পুষ্টিকর।
টিনজাত মাছ:
- প্রক্রিয়াজাতকরণ: টিনজাত টুনা বা স্যামন মাছ সাধারণত সেদ্ধ করা হয় এবং তারপর কনসার্ভ করা হয়। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হৃদরোগের জন্য উপকারী।
- স্বাস্থ্যকর দিক: টিনজাত মাছ সহজেই প্রস্তুত করা যায় এবং এতে হৃদরোগের প্রতিরোধক উপাদান যেমন ওমেগা-৩ থাকে।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার (Ultra-Processed Foods):
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো সেসব খাবার যা বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়া করা হয়, অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান, সংরক্ষণ উপাদান, কৃত্রিম রং বা স্বাদ যুক্ত করা হয়। এই ধরনের খাবারগুলো সাধারণত বেশি শর্করা, ট্রান্স ফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম, এবং প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। এতে পুষ্টির মান কমে যেতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
উদাহরণ:
- প্যাকেটজাত চকোলেট, স্ন্যাকস: এতে অতিরিক্ত চিনি, ট্রান্স ফ্যাট, এবং কৃত্রিম রং থাকতে পারে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- প্রক্রিয়াজাত মাংস: যেমন সসেজ, হ্যাম, বেকন—এগুলো অতিরিক্ত সোডিয়াম, চর্বি এবং কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি হয়, যা হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সারাংশ:
প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো সাধারণত কম পরিবর্তিত হয় এবং তাদের পুষ্টিগুণ বেশিরভাগই অক্ষত থাকে, যেমন বাদামি পাউরুটি, টিনজাত ডাল, টক দই ইত্যাদি। অন্যদিকে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো অনেক বেশি পরিবর্তিত হয় এবং এতে অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান, কৃত্রিম স্বাদ বা রং যোগ করা হয়, যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, স্ন্যাকস বা চকোলেট।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এদের পুষ্টিগুণ কম এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে।