যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল এক ধরনের নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছেন, যার নাম "Health Nutritional Index"
(HENI)। এই সূচকের মাধ্যমে তারা খাবারের গুণগত মান এবং তা মানবদেহে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা মূল্যায়ন করেছেন। গবেষণায় প্রায় ৫,৮০০ ধরনের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং প্রতিটি খাদ্যের শরীরের ওপর ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব সময় হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।
কোমল পানীয় নিয়ে গবেষণা:
গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি সাধারণ ৩৫৫ মিলিলিটার কোমল পানীয় (সোডা), যা প্রায় ১৪০ ক্যালোরি চিনি ধারণ করে, এটি শরীরে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব এতটাই তীব্র যে এটি মানুষের গড় আয়ু থেকে ১২ মিনিট কমিয়ে দেয়। কোমল পানীয়তে থাকা চিনি এবং অ্যাসিডিক উপাদান দেহের বিপাক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
গবেষণার
উল্লেখযোগ্য দিক:
1.
প্রতিদিনের খাবার ও আয়ুর সম্পর্ক:
গবেষণায় বিভিন্ন খাবার মানুষের আয়ুতে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা গণনা করা হয়েছে।
o প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, এবং কোমল পানীয়—এগুলোর কারণে মানুষের আয়ু কমে।
o স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন বাদাম, ফলমূল, শাকসবজি এবং মাছ—এসব খাবার মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
2.
তুলনামূলক প্রভাব:
o ১টি হটডগ খেলে আয়ু ৩৬ মিনিট কমে।
o ১টি বাদাম খেলে আয়ু ২৬ মিনিট বাড়ে।
3.
প্রক্রিয়াজাত খাবারের
ক্ষতি:
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাট, চিনি, এবং সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক:
- চিনির
মাত্রা: কোমল পানীয়তে অত্যধিক চিনি থাকে, যা শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অ্যাসিডিক
প্রভাব: এসব পানীয় অ্যাসিডিক হওয়ায় দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
- কৃত্রিম
উপাদান: কোমল পানীয়তে থাকা কৃত্রিম রং ও
স্বাদ বাড়ানোর উপাদানগুলো কিডনি ও
যকৃতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
করণীয়:
1.
কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি, প্রাকৃতিক
ফলের রস, বা ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
2.
দৈনিক খাবারের তালিকায় শাকসবজি, বাদাম, এবং তাজা ফলমূলের পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
3.
চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
4.
খাবারের গুণগত মানের প্রতি নজর দিতে হবে, যাতে তা শরীরের জন্য উপকারী হয়।
বিশেষ পরামর্শ:
এই গবেষণার ফলাফল মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তবে এটি একটি নির্দিষ্ট পরিসরের গবেষণা এবং অঞ্চলভেদে খাদ্যাভ্যাসের
প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। তাই এই ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।
পরিশেষে বলা যায়, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস আমাদের জীবনের গুণগত মান এবং আয়ুর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গবেষণাটি দেখিয়েছে, ক্ষতিকর খাদ্য যেমন কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের আয়ুও কমিয়ে দেয়।
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি, ডাবের পানি, কিংবা প্রাকৃতিক ফলের রস বেছে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য সচেতনতা শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, সুস্থ জীবনই জীবনের প্রকৃত সাফল্যের চাবিকাঠি।