বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী, তাদের বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং মৃত্যুর বেদনাদায়ক কাহিনি তুলে ধরা হলো:
১. বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ
মোস্তফা কামাল
জন্ম: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭, ভোলা জেলার হাজীপুর গ্রামে।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা হাবিবুর রহমান।
বীরত্ব:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আখাউড়া রণাঙ্গনে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। শত্রুর ভারী হামলার মুখেও তিনি একা প্রতিরোধ চালিয়ে যান। তার এই লড়াই মুক্তিবাহিনীর অন্যদের পিছু হটার সুযোগ করে দেয়।
মৃত্যু: ১৮ এপ্রিল ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: আহত অবস্থায় তার দেহ শত্রুপক্ষের হাতে পড়ে যায়। পরিবারের জন্য ছিল এক বিশাল বেদনার ঘটনা।
২.
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান
জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩, ঝিনাইদহ জেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবার। বাবা আব্দুর রউফ।
বীরত্ব:
ধলই এলাকায় শত্রুর শক্ত ঘাঁটিতে মাইন পুঁতে তাদের অবস্থান ধ্বংস করেন। তার বুদ্ধি ও সাহস শত্রুর বড় ক্ষতির কারণ হয়।
মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে আহত হয়ে শহীদ হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: তার সহযোদ্ধারা তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। তার মৃত্যুর খবর পরিবারে গভীর শোক বয়ে আনে।
৩.
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
জন্ম: ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫, নোয়াখালীর বাঘাচর গ্রামে।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা মোহাম্মদ আজহার পাটোয়ারী।
বীরত্ব:
মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মংলা ও খুলনা অঞ্চলে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার নেতৃত্বে "পলাশ" নামক জাহাজ শত্রুর ওপর হামলা চালায়।
মৃত্যু: ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে রূপসা নদীতে শহীদ হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: শত্রুর গুলি লেগে নদীতে পড়ে যান। তার মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিবারকে তার শেষকৃত্য দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৪.
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ
জন্ম: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬, নড়াইল জেলার মহিষখোলা (বর্তমানে নূর মোহাম্মদ নগর)।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ।
বীরত্ব:
যশোরের গোয়ালহাটিতে শত্রুপক্ষের সামনে নিজেকে উৎসর্গ করে তার দলকে রক্ষা করেন। তার এই আত্মত্যাগ মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ দেয়।
মৃত্যু: ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে শহীদ হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: তার মরদেহ শত্রুপক্ষ ছিনিয়ে নেয়। পরিবার তার দেহও দেখতে পায়নি।
৫.
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ
জন্ম: ১ মে ১৯৪৩, ফরিদপুর জেলার সালথা থানার মধুখালী গ্রামে।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবার। বাবা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ।
বীরত্ব:
রাঙ্গামাটির বুড়িঘাটে শত্রুপক্ষের অবস্থান দমন করতে একাই মেশিনগান দিয়ে প্রতিরোধ চালান। শত্রুপক্ষ তার সাহসিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়ে।
মৃত্যু: ৮ এপ্রিল ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে শহীদ হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: শত্রুর গোলাবর্ষণে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। পরিবারের কাছে শুধু তার বীরত্বের গল্প পৌঁছায়।
৬.
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান
জন্ম: ২৯ অক্টোবর ১৯৪১, ঢাকার দোহারে।
পরিবার: বাবা মা ফয়জুর রহমান ও আশরাফুন নেসা।
বীরত্ব:
পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান অপহরণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। এ সময় শত্রুর গুলিতে বিমান বিধ্বস্ত হয়।
মৃত্যু: ২০ আগস্ট ১৯৭১, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: তার দেহ শত্রুপক্ষ উদ্ধার করে। পরিবার তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
৭.
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
জন্ম: ৭ মার্চ ১৯৪৯, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ।
পরিবার: দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা মোহাম্মদ মহিব্বুল্লাহ।
বীরত্ব:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের
রেহাইচরে পাক বাহিনীর ঘাঁটি দখলের পরিকল্পনা করেন। এই অভিযানের সময় তিনি শত্রুর হাতে শহীদ হন।
মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, শত্রুর গুলিতে নিহত হন।
বেদনাদায়ক মুহূর্ত: তার মৃত্যু বিজয়ের কয়েক দিন আগে ঘটেছিল। তার পরিবার তাকে আর দেখতে পারেনি।
এই বীরেরা জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের জন্য স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। তাদের প্রতি জাতি চিরঋণী।