ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের পর এবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলেও মারা গেছে।

 

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ভিমরুলের আক্রমণে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে; এ ঘটনায় আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নিহত ব্যক্তির এক ছেলে।

ধোবাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার উপজেলার দুধনই এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন দুধনই বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কাশেম (৪৮) ও তার মেয়ে লাবিবা আক্তার (৮)। আহত সিফাত উল্লাহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ওসি জানান, দুপুরের পর আবুল কাশেম তার ছেলে সিফাত ও মেয়ে লাবিবাকে নিয়ে বন্যার পানি দেখতে নৌকায় বের হন। নৌকা গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ভিমরুলের আক্রমণের শিকার হন তারা।

নৌকা তীরে পৌঁছালে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, যেখানে লাবিবাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর আবুল কাশেম ও সিফাতকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পথেই আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়। সিফাত এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ভিমরুলের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে যদি কামড় একাধিক হয় বা ভিমরুলের বিষের প্রতি আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যালার্জি থাকে। ভিমরুলের বিষে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (এনাফিল্যাক্সিস) দ্রুত শারীরিক অবনতি ঘটাতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপের হঠাৎ পতন, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে।এ ক্ষেত্রে বাবা, মেয়ে এবং পরে ছেলেরও মৃত্যু হওয়ার কারণ সম্ভবত ভিমরুলের একাধিক কামড়ের কারণে গুরুতর বিষক্রিয়া বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া। যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে বা প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত তীব্র হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

ভিমরুল সাধারণত তখনই আক্রমণ করে যখন তারা নিজেদের বা তাদের বাসার প্রতি হুমকি অনুভব করে। এখানে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:

১. বাসার প্রতি হুমকি অনুভব করা:

  • ভিমরুল তাদের বাসাকে অত্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে চায়। কেউ যদি ভিমরুলের বাসার কাছাকাছি চলে যায় বা বাসা নাড়িয়ে দেয়, তাহলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং প্রতিরক্ষামূলক আক্রমণ করে।

২. আচমকা আন্দোলন:

  • ভিমরুলের কাছাকাছি কোনো আচমকা বা তীব্র আন্দোলন (যেমন হাত দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা) করলে তারা সেটিকে আক্রমণের ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নেয় এবং প্রতিক্রিয়া দেয়।

৩. খাদ্য বা মিষ্টিজাতীয় পদার্থ:

  • ভিমরুল মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফল, পানীয় বা খাবারের কাছে গেলে ভিমরুল সেটাকে তাদের খাদ্য বলে মনে করে এবং আক্রমণ করতে পারে, বিশেষ করে যদি তাদের কাছে খাবার সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। উত্তেজিত ভিমরুল:
  • কোনো এক ভিমরুল উত্তেজিত হলে, সে ফেরোমোন নিঃসরণ করে যা অন্য ভিমরুলদেরও আক্রমণাত্মক করে তোলে। এই সংকেত পেয়ে দলবদ্ধভাবে তারা আক্রমণ করে।

৫. প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক প্রবৃত্তি:

  • ভিমরুলের আক্রমণ করার প্রবৃত্তি মূলত তাদের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক আচরণ। তারা নিজেদের ও বাসার সদস্যদের সুরক্ষায় আক্রমণ করে থাকে।

এই কারণগুলোই মূলত ভিমরুলের আক্রমণের পেছনে কাজ করে। সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করলে ভিমরুলের আক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

ভিমরুলের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কিছু সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এখানে ভিমরুল থেকে বাঁচার কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:

১. ভিমরুলের বাসার কাছাকাছি না যাওয়া:

  • ভিমরুলের বাসা দেখতে পেলে দূরে থাকুন এবং সেটিকে বিরক্ত করবেন না। ভিমরুল সাধারণত তাদের বাসার কাছে হুমকি অনুভব করলে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

2. আচমকা হাত নড়াচড়া এড়ানো:

  • ভিমরুলের আশপাশে আচমকা হাত নেড়ে তাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এটি তাদের উত্তেজিত করতে পারে। বরং শান্তভাবে অবস্থান করুন এবং ধীরে ধীরে সরে আসুন।

৩. মিষ্টি গন্ধ এড়িয়ে চলা:

  • মিষ্টিজাতীয় খাবার ও পানীয় ভিমরুলকে আকর্ষণ করে। বাইরে থাকলে খোলা জায়গায় খাবার বা মিষ্টি পানীয় না রাখা ভালো।
  • গায়ের উপর পারফিউম বা সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার কমিয়ে দিন, কারণ মিষ্টি বা ফুলের গন্ধও ভিমরুলকে আকর্ষণ করতে পারে।

৪. উচিত পোশাক পরা:

  • বাইরে কাজ করার সময় ঢিলেঢালা বা উজ্জ্বল রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন, কারণ এসব পোশাক ভিমরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
  • গা ঢাকা পোশাক, ফুলহাতা শার্ট এবং প্যান্ট পরিধান করুন যাতে শরীরের অংশগুলো ঢেকে থাকে।

৫. বাসা সরানোর জন্য পেশাদারের সহায়তা নেওয়া:

  • যদি আপনার আশেপাশে ভিমরুলের বাসা থাকে, তাহলে নিজে সেটি সরানোর চেষ্টা করবেন না। প্রশিক্ষিত পেশাদারদের দিয়ে বাসাটি সরানোর ব্যবস্থা করুন।

৬. সতর্ক অবস্থানে থাকা:

  • বাইরে পিকনিক বা অন্যান্য কার্যক্রমের সময় সতর্ক থাকুন এবং লক্ষ্য করুন ভিমরুলের উপস্থিতি আছে কিনা। যদি থাকে, তাহলে শান্তভাবে এলাকা ছেড়ে যান।

৭. ধোঁয়া ব্যবহার:

  • ভিমরুল ধোঁয়ার উপস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে যায়। তাই যদি কোনো স্থানে ভিমরুলের বাসা থাকে, সেখানে ধোঁয়া ব্যবহার করে তাদের সরানো যেতে পারে (বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিয়ে)।

৮. ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাবধান থাকা:

  • যেখানে ভিমরুল বেশি দেখা যায় যেমন গাছের নিচে বা বাগানের মধ্যে, সেখানে সতর্ক থাকুন। গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথার উপর নজর রাখুন।

৯. ইমারজেন্সি কিট রাখা:

  • যদি আপনার বা কারও অ্যালার্জি থাকে, তবে ইপিপেন (EpiPen) বা অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সঙ্গে রাখুন। ভিমরুল কামড়ালে তাৎক্ষণিক প্রয়োগে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

১০. শান্ত থাকা:

  • যদি ভিমরুল আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করে, দৌড়ানোর বা হাত নেড়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এতে তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। শান্তভাবে জায়গা থেকে সরে আসাই ভালো।

এই সতর্কতা মেনে চললে ভিমরুলের আক্রমণ থেকে বাঁচা অনেকাংশে সহজ হবে।

ভিমরুলের কামড়ের প্রতিকারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি প্রতিক্রিয়া তীব্র হয় বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। এখানে কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলো:

১. প্রাথমিক চিকিৎসা:

  • কামড়ের জায়গা পরিষ্কার করা: প্রথমে কামড়ের স্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে কোনো ময়লা বা বিষক্রিয়া থেকে যায় না।
  • বরফ দেওয়া: ব্যথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট বরফ বা ঠাণ্ডা কাপড় দিন। তবে বরফ সরাসরি লাগাবেন না, বরং কাপড়ে মুড়িয়ে ব্যবহার করুন।
  • ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথা বা অস্বস্তি কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
  • অ্যান্টিহিস্টামিন: চুলকানি বা ফোলাভাব কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ (যেমন: সিট্রিজিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. অ্যালার্জি বা গুরুতর প্রতিক্রিয়া হলে:

  • ইপিপেন ব্যবহার: যদি কামড়ের পর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (এনাফিল্যাক্সিস) দেখা দেয় (যেমন শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া), তাহলে ইপিপেন (EpiPen) নামক ইনজেকশন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এটি জীবনরক্ষাকারী হতে পারে।
  • জরুরি বিভাগে যাওয়া: তীব্র প্রতিক্রিয়া হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ:

  • যদি ব্যথা, ফোলাভাব বা চুলকানি কয়েকদিনের মধ্যে কমে না যায়, কিংবা জায়গাটি লাল হয়ে যায় বা পুঁজ জমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভিমরুলের কামড় সামান্য হলে সাধারণত বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে ওঠা সম্ভব, তবে গুরুতর বা অ্যালার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভিমরুলের বাসা সরানো একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, কারণ ভিমরুল আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই, সাধারণত এটি করার জন্য পেশাদার কীটনাশক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তবে, যদি আপনি নিজেই ভিমরুলের বাসা সরাতে চান, তবে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে ভিমরুলের বাসা সরানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলো:

১. প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত করুন:

  • দীর্ঘ হাতা ও মোটা পোশাক পরুন: ভিমরুলের কামড় থেকে সুরক্ষার জন্য শরীরের প্রতিটি অংশ ঢাকা থাকতে হবে। গ্লাভস, বুট, এবং মুখের জন্য মাক্স বা সুরক্ষা হেলমেট পরুন।
  • কীটনাশক স্প্রে (ওয়াস্প স্প্রে): বাজারে পাওয়া যায় এমন ভিমরুল বা পোকা মারার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের স্প্রে সাধারণত নিরাপদ দূরত্ব থেকে প্রয়োগ করা যায়।
  • লম্বা কাঠ বা পোল: যদি বাসাটি সরাতে হয়, তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লম্বা কাঠ বা পোল ব্যবহার করতে হবে।<

২. সঠিক সময় বেছে নিন:

  • রাতের সময় বেছে নিন: ভিমরুলরা সাধারণত রাতে কম সক্রিয় থাকে। রাতের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় তাদের ক্রিয়াকলাপ ধীর হয়ে যায়, তাই এটি বাসা সরানোর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ সময়।

৩. কীটনাশক স্প্রে প্রয়োগ করুন:

  • দূর থেকে কীটনাশক স্প্রে দিয়ে ভিমরুলদের ধীরে ধীরে নির্মূল করার চেষ্টা করুন। স্প্রে করার সময় তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট দূরত্বে থাকুন।
  • পুরো বাসাটি স্প্রে দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে ফেলুন, যাতে ভিমরুলরা আর বাসায় ফিরে না আসতে পারে।

৪. বাসা সরানো. স্প্রে করার কয়েক ঘণ্টা পর বা পরের দিন সকালে বাসাটি সরানোর চেষ্টা করুন। লম্বা পোল বা কাঠ ব্যবহার করে বাসাটি নিচে নামিয়ে ফেলুন।

  • বাসাটি সরানোর পর সেটি একটি মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে মুঠো করে বেঁধে ফেলুন। এরপর সেটিকে ধ্বংস করার জন্য পুড়িয়ে ফেলতে পারেন বা দূরে কোথাও ফেলে দিতে পারেন।
  • ৫. পরিষ্কার এবং পুনরায় স্প্রে করা:

    • বাসা সরানোর জায়গাটি পরিষ্কার করুন এবং সেখানে আবার কীটনাশক স্প্রে দিয়ে দিন, যাতে ভিমরুল নতুন বাসা তৈরি করতে না পারে।

    ৬. বেশি ভিমরুল থাকলে পেশাদারের সাহায্য নিন:

    • যদি ভিমরুলের বাসা বড় হয় বা তাদের সংখ্যা বেশি থাকে, তাহলে পেশাদার কীটনাশক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে ডাকাই সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর উপায়।

    সতর্কতা:

    • কখনোই দিনের বেলা বা ভিমরুল সক্রিয় থাকাকালীন বাসা সরানোর চেষ্টা করবেন না।
    • যদি আপনার বা পরিবারের কারও ভিমরুলের বিষের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে নিজেরা বাসা সরানোর চেষ্টা না করে পেশাদারদের সাহায্য নিন।

    এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে সুরক্ষিতভাবে ভিমরুলের বাসা সরানো সম্ভব, তবে ঝুঁকি কমাতে সবসময় পেশাদারদের সহায়তা নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

    Gen Z with Alpha

    It sounds like you're asking about news channels or platforms aimed at Generation Z (born roughly between 1997-2012) and Generation Alpha (born from 2013 onward). These younger generations often prefer digital and social media over traditional news outlets. Some platforms have adapted to this by delivering news in formats that resonate with their preferences, such as short, engaging videos, infographics, and interactive content.

    Post a Comment

    Previous Post Next Post